বিয়ের পর থেকে প্রায়ই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতেন রুমা বেগমের (৩১) স্বামী নূর হোসেন (৩৬)। কখনো কখনো চিকিৎসাও নিতেন। তবে চার বছর আগে হঠাৎ অসুস্থ হলে রংপুর সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান স্ত্রী। ওই দিনই জানতে পারেন স্বামীর দুটো কিডনি-ই নষ্ট হয়ে গেছে। কিছুদিন চিকিৎসার পর সুস্থ হলেও স্বাভাবিক হতে পারেননি নূর হোসেন।

চিকিৎসকরা রুমা বেগমকে জানান, নূর হোসেনকে বাঁচাতে হলে কমপক্ষে একটি কিডনির ব্যবস্থা করতে হবে। কিডনি ব্যাংকে যোগাযোগ করেও কিডনি সংগ্রহ করতে পারেননি। এতে পরিবারটি হতাশ হয়ে পড়ে। স্ত্রী রুমা বেগম মনে করেছিলেন যে, আর হয়ত বাঁচবে না তার স্বামী।

গৃহবধূ রুমা বেগম বলেন, অনেক চিন্তা করে বুঝেছি, আমার কিডনি দিলে স্বামীকে বাঁচানো যাবে। তাই আমি সেচ্ছায় একটি কিডনি স্বামীকে দিয়েছি। এতে আমার পরিবার খুব খুশি। গত রোববার (৩১ অক্টোবর) বিকাল ৩টায় ঢাকার শ্যামলী সেন্টার ফর কিডনি ডিজিসেস (সিকেডি) অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে একসাথে দুই জনেরই অপারেশন হয়। অপারেশন করে স্বামীর অচল একটি কিডনি ফেলে দিয়ে স্ত্রীর দেওয়া একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। এখন অনেকটাই ভালো আছেন দুজনে।

ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মুগলিবাড়ি এলাকায়। মৃত্যু পথযাত্রী স্বামী নূর হোসেনকে (৩৫) স্ত্রী রুমা নিজের কিডনি দেওয়ার বিষয়টি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

ওই গৃহবধূ উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মুগলিবাড়ি গ্রামের নূর হোসেনের (৩৫) স্ত্রী। তাদের দুই ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে রিফাত হোসেন (১১) স্থানীয় বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলে সিফাত হোসেন (৫)।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বুড়িমারির মুগলি বাড়ি গ্রামের সোহরাব হোসেনের ছেলে নূর হোসেনের (৩৫) সাথে প্রায় ১৪ বছর আগে একই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের উফারমারা মাছির বাজার এলাকার সহিদার রহমানের মেয়ে রুমা বেগমের (৩১) বিয়ে হয়। প্রায় ৪ বছর আগে কিডনি খারাপের বিষয় জানতে পেরে রংপুরে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেন। প্রায় ৫ মাস আগে নূর হোসেন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

পরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাকে দেখানো হয়। সেখানে ডাক্তার বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রিপোর্ট দেখে চিকিৎক জানান তাঁর- দুটি কিডনি অচল হয়ে গেছে। রোগীকে বাঁচাতে হলে একটি কিডনির ব্যবস্থা করতে হবে। কিডনি ব্যাংকে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। পরে নূর হোসেনের সাথে তার স্ত্রীর কিডনি মিলে যায়। এ অবস্থায় স্বামীকে বাঁচাতে রুমা বেগম নিজের একটি কিডনি দেন।

রুমা বেগমের মা আমিনা বেগম বলেন, আমাকে খুব ভালো লাগতেছে। এ রকম বিপদে রুমার মতো প্রত্যেক স্ত্রীর তাঁর স্বামীর পাশে থাকা উচিত। আমি ও আমার স্বামী আমার মেয়েকে তাঁর স্বামীকে (জামাই) কিডনি দিতে উৎসাহ দিয়েছি।

এ বিষয়ে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নূর ইসলাম বলেন, এটি একটি বিরল উদাহরণ। এমন স্বামী ভক্ত স্ত্রী দেখিনি। দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা তাদের উভয়কে দ্রুত সুস্থতা দান করুক। স্ত্রীর কিডনি দিয়ে স্বামীর প্রাণ বাঁচানোর ঘটনায় এলাকায় অনেকে ওই গৃহবধূর প্রশংসা করছেন।